শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

কাউখালীর আজো স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়নি

 প্রতিনিধি,
Sat, 14 Dec, 2013 08:216 PM
কাউখালী (পিরোজপুর): স্বাধীনতা ৪২ বছর পার হলেও কাউখালীর বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়নি।
একাত্তরের ৯ মাসে সন্ধ্যা নদী ও উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা অসংখ্য মানুষ হত্যা করা হয় উপজেলার পূর্ব আমড়াজুরি কাউখালী লঞ্চঘাট সংলগ্ন পাইলট হাউজের সামনের বধ্যভূমিতে। পাকবাহিনী পাইলট হাউজের তিনতলা ভবনে ক্যাম্প স্থাপন করে এলাকার রাজাকার ও দালালদের সহায়তায় নিরীহ মানুষদের ধরে নির্যাতনের পর হত্যা করতো।
প্রত্যক্ষদর্শী বিআইডব্লিউটিসির স্টিমার ঘাটের শ্রমিক সরদার কুমিয়ান গ্রামের বাসিন্দা ফজলে আলী (৭৬) ওই সময় ঘাটে কাজ করতেন। একদিন তাকেও পাকবাহিনী ধরে নিয়ে যায়। এ সময় কচুয়াকাঠি গ্রামের আব্বাসের ছেলে রাজাকার আক্কেল আলী পাকবাহিনীকে ঘাটের লেবার এ কথা বুঝিয়ে মুক্ত করে দেয়। এরপর থেকে তিনি সব সময় ঘাটে যেতেন আর দেখেছেন লোকজন ধরে এনে ওই পাইলট হাউজে বেদম মারপিট করতো। ৩/৪ জন করে রশি দিয়ে বেধে টেনে নদীর পারে নিয়ে গুলি করে হত্যা করতো। তার মতে এমন কোনোদিন ছিলনা যেদিন হত্যা না করতো। ওইখানে ৪/৫ শ’ লোক হত্যা করা হয়েছে বলে তার ধারণা।
ওই বধ্যভূমিতে অসংখ্য মানুষ হত্যা করা হলেও সমকাল সুহৃদ সমাবেশের কাউখালী উপজেলার আহ্বায়ক সমাজসেবক আব্দুল লতিফ খসরুর সংগ্রহ শালা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও উপজেলা প্রশাসনের করা তালিকা থেকে ২০ জনের নাম পাওয়া যায়।
এরা হলেন- কেউন্দিয়া গ্রামের মো. মোক্তাদিরুল ইসলাম (বেলাল), মো. শাফায়েত হোসেন, কাউখালী বন্দরের দুলাল চন্দ্র মুখার্জি, পরিমল চন্দ্র, আসপর্দির গন্ধর্বুর চৈতন্য নাথ মণ্ডল, ক্ষেত্রমোহন মণ্ডল, গোপাল চন্দ্র মণ্ডল, নির্মল চন্দ্র সমদ্দার, অমূল্য চন্দ্র সমদ্দার, যদুনাথ সরকার, ডা. হরাকান্ত কর্মকার, গোলকচন্দ্র সমদ্দার, চিরাপাড়ার রাম বষ্ণু খাসকেল, বলাই সিকদার, মাখন বিশ্বাস, বিনাত সমদ্দার, অতুল মুখার্জি, বেত্ত বাসী জয়কুলের ফজলু শিকদার, আইরনের আব্দুল আউয়াল।
এ বিষয় উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. হারুন আর রশিদ সাইদ জানান, পাইলট হাউজে একটি শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল। এখানে গানবোট নিয়ে সবসময় বিভিন্ন এলাকায় অপারেশন করতো।
কাউখালী ছাড়াও রাজাপুর ও স্বরূপকাঠি বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ধরে এনে পাইলট হাউজের মধ্যে অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করতো। তারা লঞ্চ থেকে লোকজন নামিয়ে হত্যা করতো। যে কারণে সঠিক হিসাব বলা যাবেনা। ওইখানে ৪/৫ শ’ লোক হত্য করেছে পাকবাহিনী।
বিভিন্ন সময় ১০/১২ বার দরখাস্ত আকারে বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আবেদন জানানো হয়েছে। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে কাউখালী অঞ্চলের শহীদদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন