অপরূপ সুন্দর রাতের রানী নাইট কুইন
যে রাতে ফুল ফুটবে সেদিন বিকালেই কলিটি অদ্ভুত সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। তখন এর দিকে তাকালে
খুব সহজেই বোঝা যায় রাতের রানী আসছে। পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে গেলে আস্তে আস্তে মেলতে শুরু করে নাইট
কুইনের কলি। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটি দুটি করে পাপড়ি মেলতে থাকে। সেই সঙ্গে মিষ্টি এক
ধরনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
রাতের সঙ্গে নাইন কুইন ফুলের বিশেষ সম্পর্ক। রাতের বুকচিরে অনিন্দ্য
সৌন্দর্য নিয়ে রাতের রানী পৃথিবীতে এসে হাজির হয়; আবার রাতের অন্ধকার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে যায় সে।
নাইট কুইন ফুল নিয়ে পৃথিবীজুড়ে বহু কাহিনী ছড়িয়ে আছে। সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনীর
অবতারণা ঘটেছিল দু'হাজার বছর আগে বেথেলহ্যাম
নগরীতে। তখন নগরীর প্রত্যেক বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে ঘটল আশ্চর্যজনক
ঘটনা। প্রতিটি বাড়ি নাইট কুইন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল। এ ঘটনায় কৌতূহলী নগরবাসী
এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে দৌড়াতে লাগল। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারল না প্রকৃতি কেন এক অজানা উৎসবে মেতে
উঠেছে। পরে অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল। সেই রাতে বেথেলহ্যামের ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের, তিনি যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহ্যামের সব নাইট কুইন সে রাতে মেতে উঠেছিল যিশু খ্রিস্টের
জন্মোৎসবে। এ জন্য আজো অনেকের কাছে এ ফুলটি 'বেথেলহ্যাম ফ্লাওয়ার' নামে পরিচিত।
এ ফুলের মজার বৈশিষ্ট্য হলো এর কলি বের হয় পাতা থেকে। প্রথমে পাতার যে কোনো
এক পাশে ছোট গুটির মতো একটি বস্তু সৃষ্টি হয়। এরপর গুটিটি আস্তে
আস্তে বড় হয়ে উঠতে থাকে। দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে ছোট্ট গুটিটি পরিপূর্ণ কলিতে রূপান্তরিত হয়। যে রাতে ফুল ফুটবে
সেদিন বিকালেই কলিটি অদ্ভুত সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। তখন এর দিকে তাকালে
খুব সহজেই বোঝা যায় রাতের রানী আসছে। পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে গেলে আস্তে আস্তে মেলতে শুরু করে নাইট
কুইনের কলি। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটি দুটি করে পাপড়ি মেলতে থাকে। সেই সঙ্গে মিষ্টি এক
ধরনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ গন্ধে তীব্রতা না থাকলেও আছে এক ধরনের অদ্ভুত মাদকতা, যা যে কোনো মানুষকে মোহিত করার জন্য যথেষ্ট। পরিপূর্ণ অন্ধকার যখন
রাতকে আনন্দিত করে নাইট কুইন তখন অন্ধকারে বুকচিরে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মেলে ধরে। রাত যত বাড়তে থাকে
তার রূপ ততই খুলতে থাকে। নিশাচর পতঙ্গরা রাতের রানীর মোহময় সৌরভে আকৃষ্ট হয়ে উন্মাদের মতো ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে
পড়ে তার বুকে। পূর্ব আকাশে আলোকছটা দেখা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে ওঠে নাইট কুইনের। রাতের রানী দিনের আলো
সহ্য করতে পারে না। চারিদিকে আলোকিত হওয়ার আগেই পাপড়িগুলো মস্নান হয়ে নুয়ে পড়ে, গুটিয়ে ফেলে নিজেকে পরিণত হয় চুপসে যাওয়া মৃত ফুলে।
বর্তমানে এর বিস্তার বিশ্বজুড়ে। আমাদের দেশেও রয়েছে এর বিস্তার। নাইট কুইনের জন্ম বীজ
থেকে নয়, পাতা থেকে। এক টুকরো পাতা ছিঁড়ে
মাটিতে ফেলে রাখলে কয়েক দিনের মধ্যে ছেঁড়া পাতার চারদিকে চারা গজিয়ে ওঠে। আমাদের দেশে এ ফুল
ফোটে বর্ষাকালে। আপনার বাড়ির আশপাশে জায়গা থাকলে অথবা টবে ফুলের গাছ লাগান। ফুলকে ভালোবাসুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন